রাষ্ট্র সমন্ধে কিছু প্রাথমিক ধারণা

রাষ্ট্র সমন্ধে কিছু প্রাথমিক ধারণা 


রাষ্ট্র সমন্ধে কিছু প্রাথমিক ধারণা
রাষ্ট্র সমন্ধে কিছু প্রাথমিক ধারণা 


‘রাষ্ট্র' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন অ্যারিস্টটল। 


রাষ্ট্র কি ? 

রাষ্ট্র হল বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন একটি জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং যার একটি সুসংগঠিত শাসনব্যবস্থা আছে, যার প্রতি জনগণের অধিকাংশ আনুগত্য প্রদর্শন করে। রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(ক) জনসমষ্টি; (খ) নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড (গ) সরকার  ঘ) সার্বভৌম ক্ষমতা। এই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। এদের মধ্যে কোন একটি উপাদান না থাকলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনটিকে আর রাষ্টের পর্যায়ভুক্ত করা চলে না। 



সার্বভৌমিকতা হল চরম ও চূড়ান্ত। একমাত্র রাষ্ট্রেরই এই সার্বভৌমিকতা আছে। রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে বলে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ডের মধ্যে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের নির্দেশ মানতে বাধ্য। কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের নির্দেশ না মানলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে। কোন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের নির্দেশ না মানলে রাষ্ট্র সেই প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে পারে।



গেটেল, সিলি, বাজেস, গার্নার, লিকক প্রমুখরা এবং ইউনেস্কো রাষ্ট্রবিজ্ঞান নামটি ব্যবহার করেছেন। 



গেটেলের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র, রাজনৈতিক সংগঠন, সরকারের কার্যাবলী, রাজনৈতিক তত্ত্বসমূহ প্রভৃতিকে বােঝায় |



গার্নার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে রাষ্ট্রের আলােচনা সম্পর্কিত বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। তার মতে “রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শুরু ও শেষ রাষ্ট্রকেদিয়ে”। 



ইউনেস্কো (UNESCO- ১৯৪৮ খ্রিঃ)এর মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল (ক) রাজনৈতিক তত্ত্ব ও তার ইতিহাস, (খ) রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ- সংবিধান, রাজনৈতিক দল, থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রভৃতি, (গ) বিভিন্ন রাজনৈতিক গােষ্ঠী, জনমত নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য, (ঘ) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিসংগঠন ও আইন প্রভৃতি। 



রাজনীতি বলতে সামাজিক কার্যকলাপকে বােঝায়, যা সমাজে সর্বস্তরের বিরােধ মীমাংসার সঙ্গে যুক্ত। এর সঙ্গে ক্ষমতা অর্জন, প্রয়ােগ ও প্রভাবজনিত। ‘রাজনীতি’ কথাটি সর্বপ্রথ৷ ব্যবহার করেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। 



স্যার জন সিলির মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যতিরেকে ইতিহাসে আলােচনা সম্পূর্ণ নিষ্ফল এবং ইতিহাস ব্যতিরেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান " ভিত্তিহীন।



সংবিধান হল কোন দেশের মৌলিক আইন, যার দ্বারা এক দেশ পরিচালিত হয়। 



রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ‘সর্বোত্তম বিজ্ঞান’ আখ্যা দিয়েছেন অ্যাসিস্টটল। গেটেলের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলােচনা করে। 



অ্যারিস্টটলের মতে, সমাজ বহির্ভূতভাবে যে বাস করে সে হয় পশু, নয় ভগবান।



লেনিনের মতে, বৈপ্লবিক মতবাদ ছাড়া বৈপ্লবিক আন্দোলন অসম্ভব। 



অ্যারিস টলের মতানুসারে, “পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ সুখী ও সম্মানজনক জীবনপথের উদ্দেশ্যে যখন কয়েকটি গ্রাম, পরিবার একত্রিত হয়, তখন তাকে রাষ্ট্র বলে। অপরদিকে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের মতে, “রাষ্ট্র হ’ল আইনানুসারে সংগঠিত, নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডের অধিকারী একজন| সমষ্টি”। দার্শনিক কার্লমার্কসের মতে, “রাষ্ট্র বলপ্রয়ােগের বিশেষ প্রতিষ্ঠান” এবং লেনিন বলেন, “রাষ্ট্র শ্রেণী শাসনের যন্ত্র"। 



অধ্যাপক ল্যাস্কি রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন, আধুনিক রাষ্ট্র হল এমন একটি ভৌগােলিক সমাজ, যা শাসক ও শাসিতের মধ্যে বিভক্ত এবং যেখানে শাসক তার নির্দিষ্ট স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে অসাম্য প্রতিষ্ঠানের ওপর আধিপত্য দাবী করে। 



রাষ্ট্র বলতে বার্কার এমন একটি নির্দিষ্ট ও বিশেষ ধরণের সংগঠনকে বুঝিয়েছেন, যা বাধ্যতামূলক আইনব্যবস্থা, সংরক্ষণের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে নিয়ােজিত এবং যা প্রচলিত প্রথা ও প্রয়ােগযােগ্য আইনের মাধ্যমে তার কার্যাবলী পরিচালনা করে। 



রাফায়েল-এর মতে, “রাষ্ট্র হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা শক্তির দ্বারা বলবৎযােগ্য আইনের সহায়তায় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করে, যার ভৌগােলিক সীমারেখার মধ্যে সার্বজনীন কর্তৃত্ব আছে এবং যার সার্বভৌম স্বীকৃতি লাভ করেছে। 



প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক আইনবিদ ওপেনহাইম রাষ্ট্রের একটি সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যখন কোনো দেশের জনসাধারণ তাদের নিজেদের সার্বভৌম সরকারের অধীনে বসবাস করে, তখনই তাকে সঠিক অর্থে রাষ্ট্র বলা যায়। 



ম্যাকিয়াভেলী 'The Prince' পুস্তকে প্রথম রাষ্ট্র ধারণাটির আধুনিক ব্যাখ্যা করেন। তিনি রাষ্ট্র বলতে ব্যক্তির উপর ক্ষমতা আরােপকারী এক প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়েছেন। ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.