ভারতের বিচার ব্যাবস্থায় হাই কোর্টের ভূমিকা

ভারতের বিচার ব্যাবস্থায় হাই কোর্টের ভূমিকা 

ভারতের বিচার ব্যাবস্থায় হাই কোর্টের ভূমিকা -The role of the High Court in the Indian judiciary
ভারতের বিচার ব্যাবস্থায় হাই কোর্টের ভূমিকা -The role of the High Court in the Indian judiciary

১. ভারতীয় সংবিধানের ২১৪ নং ধারানুযায়ী, প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি করে উচ্চ আদালত বা মহাধর্মাধিকরণ (High Court) থাকবে। তবে ২৩১ নং ধারানুযায়ী, সংসদ আইন প্রণয়ন করে একাধিক রাজ্যের জন্য একটি হাইকোর্টের ব্যবস্থা করতে পারে। ওড়িষ্যা হাইকোর্ট ওড়িষা রাজ্যের জন্য, এলাহাবাদ হাইকোর্ট উত্তর প্রদেশের জন্য এরূপ একটি রাজ্যের জন্য একটি হাইকোট আরও অনেকগুলি রয়েছে। অপর দিকে কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্য, মুম্বাই হাইকোর্ট মহারাষ্ট্র, গােয়া, দাদরা নগর হাভেলী, দমন ও দিউ এর জন্য এরূপ কতগুলি হাইকোর্ট একাধিক রাজ্যের জন্য গঠিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে ২৪টি হাইকোর্ট রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যা কত হবে সে সম্পর্কে সংবিধানে কিছু বলা হয়নি।


বিচারপতি পদের যােগ্যতা : 

১) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। ২) ন্যূনতম দশ বছর হাইকোর্টের অ্যাডভােকেট হিসাবে কাজ করতে হবে। ৩) ন্যূনতম দশ বছর কোন্ অধঃস্তন আদালতে বিচারপতি হিসাবে কাজ করতে হবে। 


বিচারপতিদের নিয়ােগ : 

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সহ সকল বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাজ্যপালদের তত্ত্বগত ভূমিকা থাকলেও বিচারপতি নিয়ােগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সুপারিশ গুরুত্ব পায়। 


বিচারপতিদের কার্যকাল : 

নিয়ােগের পরে বিচারপতিরা ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত নিজ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। হাইকোর্ট-এর অতিরিক্ত (additional) বিচারপতি ও কার্যকর (acting) বিচারপতিদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর বয়স নির্দিষ্ট। 


বিচারপতিদের পদচ্যুতি ও নিরপেক্ষতা : 

১.সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের ন্যায় প্রযােজ্য। 

২. হাইকোর্টের মূল এলাকার এক্তিয়ার দেওয়ানী মামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাই হাইকোর্টের ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে আগে মূল এলাকা ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। সুতরাং ভারতে হাইকোর্টগুলির মূল এলাকার ফৌজদারী বিচার হয়। না।

৩. আপীল কোর্ট হিসাবে হাইকোর্ট : 

রাজ্যের মধ্যে হাইকোর্ট হল দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত আপীল আদালত। নিম্নতর আদালত থেকে হাইকোর্টে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার আপিল হতে পারে। যে সকল দেওয়ানী মামলার সঙ্গে অধিক পরিমাণ অর্থ জড়িত সেগুলি জেলা জজের আদালত থেকে হাইকোর্টে আপীল করা যায়। কোনও ফৌজদারী মামলার দায়রা বিচারক কাউকে ৭ বছরের বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড দিলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করা যায়। 


৪. হাইকোর্টের মর্যাদা : 

১) সুপ্রিমকোর্টের মতাে লেখ জারী করতে পারে। 

২) অধঃস্তন আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলার সঙ্গে সাংবিধানিক আইনগত প্রশ্ন জড়িয়ে থাকলে, তবে হাইকোর্ট ওই মামলাটির বিচার করতে পারে। 

৩) রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হিসাবে অধস্তন আদালতগুলির ওপর হাইকোর্ট নিয়ন্ত্রণ আরােপ করে। 

৪) সুপ্রিমকোর্টের মতাে হাইকোর্টগুলিও অভিলেখ আদালত (Court of Record) হিসাবে কাজ করে।।

৫. অবসর গ্রহণের পর সুপ্রিম বা হাইকোর্টের বিচারপতিরা রাজ্যপাল, রাষ্ট্রদত, উপাচার্য, মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি পদে বসতে পারেন। 

নিম্নে পাঁচ ধরনের লেখ (Writs) সম্বন্ধে আলােচনা হল


১. ‘পরমাদেশ’ (Mandamus) : 

এটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘আমি আদেশ দিচ্ছি' এই আদেশ বলে সুপ্রিম বা হাইকোর্ট কোন অধঃস্তন আদালত বা সরকারের যে কোন বিভাগকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য পরমাদেশ জারী করতে পারে। 

২. বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ (Habeas Corpus) : 

এটি হচ্ছে যে বন্দীকে সশরীরে আদালতে আবশ্যিকভাবে হাজির করতে হবে। অর্থাৎ কোনও একজন ব্যক্তিকে কি কারণে বন্দী করা হয়েছে সেটা জানার পূর্ণ অধিকার সুপ্রিমকোর্ট বা যে কোন কোর্টের আছে। যদি সুপ্রিমকোর্ট বিবেচনা করে দেখে যে সেই ব্যক্তিকে বিনা কারণে বন্দী করা হয়েছে তাহলে তাকে মুক্তি দেওয়াও যেতে পারে। 

৩. প্রতিষেধ’ (Prohibition) : 

এটির আক্ষরিক অর্থ হল নিষেধ করা। এই আদেশ বলে ঊর্ধতন আদালত অধঃস্তন আদালতকে তার এলাকা বহির্ভূত কাজ করতে বাধা দেয়। বাধা না মানলে নিষেধ লঙ্ঘনকারীকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করে উচ্চ আদালত।


৪. অধিকার পৃচ্ছা (Quo Warranto) : 

এটির আক্ষরিক | অর্থ হল ‘কোন অধিকারে'। কোন ব্যক্তি যদি এমন কোনও পদের দাবি করে যার জন্য তার শিক্ষাগত অথবা বিধিসম্মত যােগ্যতা নেই, আদালত জানতে চাইবে যে কোন্ অধিকারে ব্যক্তি বিশেষ একটি বিশেষ পদের দাবিদার হতে চাইছে।


৫. উ ৎপ্রেষণ (Certiorari) : 

এটি বলতে বােঝায় ‘বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া'। সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট অধঃস্তন আদালতকে বাধ্য করতে পারে বিচারাধীন কোনও বিষয় সম্পর্কে সুপ্রিম বা হাইকোর্টকে অবহিত করার জন্য। প্রয়ােজনে গুরুত্বপূর্ণ কোনও মামলার শুনানীর জন্য উচ্চ আদালতে পাঠাতে বাধ্য করতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.